মাদক ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রনে পঞ্চায়েত কমিটিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন – আবু সাউদ মাসুদ

ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট : 

নারায়ণগঞ্জে মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পাড়া-মহল্লার পঞ্চায়েত কমিটিকে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রেসক্লাব সভাপতি আবু সাউদ মাসুদ। তিনি মনে করেন, প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজভিত্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া এই ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আবু সাউদ মাসুদ বলেন, “মাদক ব্যবসায়ীরা এখন প্রশাসনের চাইতে অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তারা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ গজ দূর থেকেই প্রশাসনের উপস্থিতি টের পায়। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযান সফল হচ্ছে না। পঞ্চায়েত কমিটিকে প্রশাসনিক ব্যাকআপ দেয়া গেলে মহল্লাভিত্তিক মাদক ব্যবসা অনেকটা সংকুচিত হয়ে আসবে।”
তিনি সাম্প্রতিক সময়ের মাদককে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সহিংসতার বিষয়টিও তুলে ধরেন। উল্লেখ করে বলেন, “এই মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে আজমেরী ওসমানের অন্যতম ক্যাডার ইভন খুন হয়েছে। শুধু তাই নয়, মাদক বহনে কিশোরদের ব্যবহার করার কারণে কিশোর গ্যাং ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব পুরো সমাজেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।”
সাংবাদিক এ নেতা আরও জানান, কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড রাত সাড়ে ১১টার পর পরিণত হয় মাদক সেবন ও বিক্রয়ের আড্ডায়। “ওখানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবাধে চলছে মাদক ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে রাত ১০টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে। আগে যেখানে গভীর রাত পর্যন্ত হোটেলগুলো চালু থাকত, এখন ১১টার মধ্যেই সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তনে প্রশাসনের নজর দেয়া জরুরি।”
তিনি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় দায়েরকৃত মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, “মিডিয়া কোনো তথ্য পাচ্ছে না, আমরা কিছুই জানি না। আগামী সভায় পুলিশ সুপারকে এসব মামলার অগ্রগতি বিস্তারিত জানাতে হবে।”
রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষায়, “ফ্যাসিবাদী দোসরদের সহযোগীরা মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে এখনো সক্রিয়। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া তো এরা এলাকায় অবস্থান করতে পারে না। কারো কারো ছত্রছায়ায় তারা আজও বহাল তবিয়তে দাপটের সঙ্গে অবস্থান করছে। এদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনতে পারলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে, এমনকি খুন হওয়ার মত ঘটনাও ঘটতে পারে।”
উল্লেখ্য, সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার কথা জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, “শুধু প্রশাসনের পক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব নয়, সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।” অন্যদিকে পুলিশ সুপার কঠোর ভাষায় বলেন, “নারায়ণগঞ্জে যে যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, আইন ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।”
সভায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ এবং প্রেসক্লাব সভাপতির বক্তব্য নারায়ণগঞ্জে মাদকবিরোধী অভিযানে একটি নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন মহলের জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *