সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে এক ব্যক্তি স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি হলেন জামান বক্স, যিনি একসময় আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, জামান বক্স বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সংযোগ রেখে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম সাজানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, জামান বক্সের নেতৃত্বে এলাকায় মাদকদ্রব্যের ব্যবসা, অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই তার সহযোগীরা, যারা আওয়ামী লীগের কিছু হত্যা মামলার আসামী, অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ায়, যা স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জামান বক্সের সহযোগী আকিবুল্লা গ্রেফতার হলেও, স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, জামান বক্স এখনো গ্রেফতার হয়নি। তারা বলছেন, কোনও অদৃশ্য শক্তির কারণে তিনি এখনও গ্রেফতার হয়নি, যা এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। স্থানীয়রা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থাকে ‘ডেবিল্ট হান্ট’ অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জের এই পরিস্থিতি নতুন নয়। কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে সন্ত্রাস ও আতঙ্কের ছায়া বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, জামান বক্সের মহড়া রাতে শুরু হয় এবং বিভিন্ন অলিতে গলিতে পলাতক আসামিদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো হয়। এতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা রাতে বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পান।
এতে শঙ্কার বিষয় হলো, শুধু স্থানীয়দের উপরই নয়, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও তার প্রভাবের ছায়ায় আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির একটি সূত্র জানায়, জামান বক্স ও তার সহযোগীরা এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানদারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যারা তার কথায় না চলে, তাদের উপর বিভিন্ন ধরনের হুমকি বা অর্থের দাবি করা হয়। এতে ব্যবসা করতে আগ্রহী মানুষেরা ভয়ভীতি পাচ্ছে।
সেখানে আরও একটি সামাজিক সমস্যা হলো, যুবসমাজের ওপর প্রভাব। স্থানীয়রা বলছেন, জামান বক্স এলাকার যুবক ও কিশোরদের নিয়ন্ত্রণ করে রাখে, মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত করে। এতে স্থানীয় যুব সমাজ নষ্ট হচ্ছে এবং অপরাধের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জামান বক্সের কর্মকাণ্ডের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের আটক করার জন্য বিশেষ অভিযান পরিকল্পনা চলছে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, প্রশাসনের পদক্ষেপ এখনও পর্যাপ্ত নয়।
রাজনৈতিক দিক থেকেও বিষয়টি উদ্বেগজনক। স্থানীয়দের অভিযোগ, জামান বক্স স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও দলের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি কিছু স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কাছে অর্থ দিয়ে দলের কর্মকাণ্ড সাজানোর অভিযোগও উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ‘ডেবিল্ট হান্ট’ অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিলে এলাকায় শান্তি ফিরবে, সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা নিরাপদে থাকতে পারবে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুর আলম জানিয়েছেন, জামান বক্সের কর্মকাণ্ডে আমরা নজর রাখছি। সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং আমরা মূল হোতাকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছি। স্থানীয়দের সহযোগিতাও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রশাসনের সমন্বিত পদক্ষেপ না হলে জামান বক্সের অবৈধ কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাবে, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রভাবিত করবে। তারা প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিদ্ধিরগঞ্জের এই পরিস্থিতি কেবল স্থানীয় নয়; এটি নারায়ণগঞ্জ জেলায় রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। রাজনৈতিক নেতাদের উভয়পক্ষের সমঝোতা ও প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে।
সিদ্ধিরগঞ্জে জামান বক্সের দাপট স্থানীয়দের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ, বিশেষ গোয়েন্দা অভিযান এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ছাড়া এই এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। স্থানীয়রা আশা করছেন, জামান বক্সের মতো সন্ত্রাসী ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।