বন্দর উপজেলা বিএনপিতে ৪ নেতার চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য

বন্দর প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বন্দর উপজেলায় চলছে নিরব চাঁদাবাজির দাপট। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা বিএনপির চারজন প্রভাবশালী নেতা চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা, আপোষ বানিজ্য ও বিভিন্ন সেক্টর দখলের মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর এ ধরনের কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বন্দর উপজেলা নিয়ন্ত্রণে নির্ভর করছেন শাহিন আহমেদ ওরফে মোটা শাহিনের ওপর। একসময় জাতীয় পার্টির মাকসুদ হোসেনের কর্মী হিসেবে কাজ করা শাহিন এখন বিএনপির হয়ে সক্রিয় হলেও এখনও বিভিন্ন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষেই কাজ করেছেন।

শাহিনের মাধ্যমে সাখাওয়াত স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছেন এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় বিএনপির ভেতরে-বাইরে ঘুরপাক খাচ্ছে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ এক সাক্ষাৎকারে কটাক্ষ করে বলেন, শাহিন মুরগী ধরে সাখাওয়াতের কাছে নেয়, সাখাওয়াত সেই মুরগী জবাই করে।”

২০২২ সালে শাহিনকে মহানগর বিএনপির সদস্য পদে রাখেন সাখাওয়াত। পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী করলেও তিনি হেরে যান। এর আগে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদেও শাহিনকে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাখাওয়াত। এসব নিয়েই দলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

সম্প্রতি শাহিনের পক্ষ নিয়ে ৪৩ জন নেতাকর্মীর স্বাক্ষরসহ হিরণ ও লিটনের বিরুদ্ধে তারেক রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন সাখাওয়াত। এর জবাবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিরণ ও সম্পাদক লিটন গণমাধ্যমে সাখাওয়াতকে একহাত নেন। পাল্টা হিসেবে শাহিন গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানায়।

২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ধামগড় ইউনিয়নে লাভলী মেম্বার ও তার স্বামী আমান উল্লাহর সেচ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার ও তাঁরা মিয়া প্রকল্প দখলের চেষ্টা করলে মাকসুদের লোকজন তাদের মারধর করে পানিতে চুবিয়ে অপমান করে। এ ঘটনায় শাহিন, মোহসীন ও তাওলাদ হোসেনদের নাম উঠে আসে।

এর আগে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর যুবদল নেতা সম্রাট হাসান সুজন বন্দরের ব্যবসায়ী নূর হোসেনের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওইদিন বিকেলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বন্দরে গেলে নূর হোসেনের লোকজন তাকে লাঞ্ছিত করে। পরে নূরের ভাই শাহাদাত হোসেন আদালতে মামলা করেন, যেখানে সুজনসহ একাধিক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়।

বন্দর উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে এখন চাঁদাবাজি, দখলবাজি, পদ-পদবীর লড়াই এবং অন্তর্দ্বন্দ্বই আলোচনার মূল বিষয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ এ পরিস্থিতিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ছত্রছায়ায় এসব কর্মকাণ্ড চলছে বলে অভিযোগ থাকলেও দলীয় কোন্দলের কারণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বন্দরের রাজনৈতিক অঙ্গন দিন দিন আরও অস্থির হয়ে উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *