চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে অপহরণের অপচেষ্টা চলছে : মামুনুল হক

ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট 


বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মামুনুল হক বলেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যেভাবে ১৯৭২ সালের বাকশালের সংবিধানের মাধ্যমে ছিনতাই করা হয়েছিল, আজ একইভাবে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে অপহরণ করার অপচেষ্টা চলছে।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় শহরের ডি.আই.টি চত্বরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশাল গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সমাবেশে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মামুনুল হক বলেন,চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে বাইপাস করে কেউ যদি রাজনীতি করার চেষ্টা করে, তবে রাজপথে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আগামীর বাংলাদেশ ৭২-এর সংবিধানের আদর্শে নয়, বরং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আদর্শে পরিচালিত হবে।

তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থান প্রায় দুই হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। তাই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে বাস্তবায়ন করা জরুরি।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাকশালের সংবিধান যেমন মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে ছিনতাই করেছিল, আজ তেমনি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের প্রত্যাশিত রাষ্ট্র কাঠামোকে পাশ কাটিয়ে একটি “অন্য ধারার রাজনীতি” চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও মহানগর সভাপতি মাওলানা মামুনুর রশীদ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাওলানা হোসাইন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল কাদের নদভী কাসেমীসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বিভিন্ন উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। সভাস্থল “খেলাফত মজলিস জিন্দাবাদ” স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

গণসমাবেশে বক্তারা শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ দেশের বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও দমননীতির বিচারের দাবি জানান। তারা বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের রক্তে রঞ্জিত এই দেশ আজও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত।

বক্তারা ইসলামভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, “দেশে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো ইসলাম ও জনগণের প্রত্যাশার পরিপন্থী। তাই খেলাফত প্রতিষ্ঠাই দেশের প্রকৃত মুক্তির পথ।

গণসমাবেশের অন্যতম আলোচিত অংশ ছিল আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থীতা ঘোষণা। সংগঠনের আমীর মামুনুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনে “রিকশা মার্কা” প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন,আমরা জনগণের বিশ্বাস ও ইসলামী শাসনের আদর্শ নিয়ে মাঠে নামছি। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী থাকবে এবং জনগণকে ইসলামী শাসনের পক্ষে ভোট দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।”

এই ঘোষণার মাধ্যমে খেলাফত মজলিস স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং অন্যান্য ইসলামী দলের জোট কাঠামোর বাইরেও সংগঠনটি স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণআন্দোলন ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। এই আন্দোলনে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। জুলাই সনদ নামে পরিচিত একটি রাজনৈতিক নথিতে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামোর দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

খেলাফত মজলিসসহ ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করে আসছে যে, জুলাই সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা ও ইসলামী মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা না হলে গণঅভ্যুত্থানের আত্মত্যাগ ব্যর্থ হবে।

বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের রাষ্ট্র কাঠামো ও নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে নানা টানাপোড়েন চলছে। এর মধ্যেই মামুনুল হকের এই বক্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের ডি.আই.টি চত্বরে অনুষ্ঠিত এই গণসমাবেশে মামুনুল হক ও খেলাফত মজলিসের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। তারা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের “বাইপাস রাজনীতি” মানবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পাশাপাশি ইসলামী শাসনের পক্ষে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা স্থানীয় রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *