ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট
বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে “শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে নারায়ণগঞ্জে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ সভার আয়োজন করে “স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ” এবং বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস)
সভায় বক্তারা বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত মানোন্নয়ন ঘটাতে হলে প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কার এবং শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সচিব সভায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রয়োজনীয় সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর যে সংস্কার পরিকল্পনা দাখিল করে, তাতে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে পৃথক করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ ও ‘উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর’ গঠনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আলাদা করার সুপারিশ করে বলা হয়— মাধ্যমিক শিক্ষা বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার অধীনে থাকায় প্রাপ্য গুরুত্ব পাচ্ছে না। এর ফলে মাধ্যমিক শিক্ষার মান ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের ফাইলে অনুমোদন দিলেও অজানা কারণে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
তারা বলেন, বর্তমানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মরত থাকলেও পদোন্নতিযোগ্য পদ মাত্র ৪ শতাংশ। ফলে অনেক শিক্ষক ৩২-৩৩ বছর চাকরি করেও কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন।
১৯৭৩ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ও থানা শিক্ষা অফিসার একই গ্রেডে ছিলেন এবং একে অপরের বদলযোগ্য পদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে অন্যান্য পদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা রয়ে গেছেন ১০ম গ্রেডে যা স্পষ্ট বৈষম্য।
বক্তারা প্রস্তাব করেন, জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুসারে বৈষম্য দূর করতে সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে চারস্তরবিশিষ্ট পদসোপান (সহকারী শিক্ষক ৯ম, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ৬ষ্ঠ, সিনিয়র শিক্ষক ৫ম ও প্রিন্সিপ্যাল শিক্ষক ৪র্থ গ্রেড) বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে বেতন-বৈষম্য দূর হবে, পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং মেধাবীদের শিক্ষকতায় ধরে রাখা সম্ভব হবে।
সভায় জানানো হয়, সরকারি মাধ্যমিকে বর্তমানে সিনিয়র শিক্ষক ২,৫০০টি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ২৫০টি, সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয় পরিদর্শক ৫২৫টি, প্রধান শিক্ষক ৩০০টি, জেলা শিক্ষা অফিসার ৩৩টি, বিদ্যালয় পরিদর্শক ও সহকারী পরিচালক ২০টি এবং উপপরিচালক ১০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। অথচ এসব পদে পদোন্নতি দিতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে না।
এছাড়া প্রায় ৬ হাজার শিক্ষক টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ২০২৫ সালের ৪ মে আপিল বিভাগের রায় সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করেছে।
বক্তারা অবিলম্বে ডিপিসির মাধ্যমে ন্যায্য পাওনা পরিশোধ, শূন্যপদ পূরণে পদোন্নতি এবং সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তারা সতর্ক করে বলেন, আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ না নিলে মানববন্ধন, মহাসমাবেশসহ ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিক মাসুদা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ: প্রধান শিক্ষক রওশন ফেরদাউসিসহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তৃতা দেন শিক্ষক সমাজের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা।