ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি সিমাডাইন মধুঘড় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরিফ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সে এলাকায় মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং পরিচালনা ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তার প্রভাবে এলাকার বহু তরুণ ও কিশোর অপরাধের পথে ও নেশার জালে আটকে পড়েছে। একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েও তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে, যা স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক ও ক্ষোভ তৈরি করেছে।
জালকুড়ি সিমাডাইন মধুঘড় এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আরিফ এই এলাকারই স্থায়ী বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে সংগঠিতভাবে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। বর্তমানে সে এই এলাকায় একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে, যার মাধ্যমে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য সহজে ছড়িয়ে পড়ছে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন,আরিফের কারণে আমাদের ছেলেমেয়েদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দিনরাত অচেনা লোকজন আসা-যাওয়া করে। যারা মাদক কিনতে আসে, তাদের মধ্যে কিশোরদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নেশায় ডুবে যাচ্ছে।
আরিফ শুধু মাদক ব্যবসায়ই নয়, সে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বও দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের ভাষায়, সে কয়েক ডজন কিশোরকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে। ছিনতাই, মারামারি, চাঁদাবাজি, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো—সব ক্ষেত্রেই আরিফের গ্যাংয়ের তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
একজন অভিভাবক বলেন,আমাদের ছেলেরা স্কুল থেকে ফিরলেই গ্যাংয়ের ছেলেরা ডাকে। না গেলে হুমকি দেয়। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে আরিফের নাম ব্যবহার করে ভয় দেখায়। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক দফা পুলিশ, ডিবি এবং র্যাব অভিযান চালালেও আরিফকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের ধারণা, সে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় থেকে সবসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগেই তথ্য পেয়ে পালিয়ে যায়।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সূত্র জানায়,আরিফ যখনই পুলিশের অভিযান হয়, তখনই সে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। মনে হয়, কেউ না কেউ আগেই তাকে খবর দিয়ে দেয়। এজন্যই এতদিন ধরে সে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
আরিফের এই অবাধ দৌরাত্ম্যে এলাকাবাসী এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। দিনরাত অচেনা মানুষের আনাগোনা, মাদকসেবীদের আড্ডা, গ্যাংয়ের দাপট—সব মিলিয়ে জালকুড়ি সিমাডাইন মধুঘড় এলাকার পরিবেশ ধীরে ধীরে অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। সাধারণ পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে।
আরিফকে ঘিরে শুধু স্থানীয় মাদক ব্যবসা নয়, এর পেছনে একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে ধারণা অনেকের। স্থানীয় সূত্র বলছে, সে নেপথ্যে থেকে এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মাদক সরবরাহ করে। তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইয়াবা ও গাঁজা সহজেই এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
এলাকাবাসী মনে করছেন, এই সিন্ডিকেটে শুধু স্থানীয় নয়, বাইরের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি ও পৃষ্ঠপোষকরাও জড়িত থাকতে পারে। এই কারণেই আরিফ বারবার গ্রেফতার এড়াতে পারছে এবং নির্বিঘ্নে তার অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা ইতিমধ্যেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। তারা বলছে, এখন সময় এসেছে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার। একটি সুসংগঠিত মাদক ও কিশোর গ্যাং নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো জরুরি।
জালকুড়ি সিমাডাইন মধুঘড় এলাকার মানুষ এখন একটাই দাবি তুলেছে—আরিফ ও তার সিন্ডিকেটকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তারা চাইছে, পুলিশ, ডিবি ও র্যাব সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে এই মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং লিডারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি সিমাডাইন মধুঘড় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আরিফ নামের এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের অভিযোগ এখন প্রশাসনের সামনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এখন দেখার বিষয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কত দ্রুত এবং কতটা কার্যকরভাবে এই ভয়াবহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সময়মতো কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এই সিন্ডিকেট আরও বিস্তৃত হয়ে উঠতে পারে, যা পুরো নারায়ণগঞ্জের তরুণ প্রজন্মকে বিপথে নিয়ে যাবে।