অভিযোগের ৪ দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি ফতুল্লা থানা পুলিশ

ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট


নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার জামতলা এলাকায় কুয়েতপ্রবাসী এক পরিবারের ওপর সংঘটিত সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনায় ৪ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। এতে ভুক্তভোগী পরিবার ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৫ অক্টোবর ভোরে। জামালপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে ফেরার পথে চাষাড়া থেকে ব্যাটারিচালিত মিশুকে করে বাসার দিকে যাওয়ার সময় ফতুল্লার জামতলা হীরা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে মোটরসাইকেলযোগে তিনজন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত তাদের পথরোধ করে। দুর্বৃত্তরা ধারালো সুইচ গিয়ার ও চাকু দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে নারীদের গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল, নগদ অর্থসহ প্রায় ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী মোঃ আতিকুর রহমান একজন কুয়েত প্রবাসী। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় ভাড়াবাসায় বসবাস করছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেশের বাড়ি জামালপুরে বেড়াতে যান।

১৪ অক্টোবর রাতে তিনি বড় ভাই খাজা মিয়া, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রুমি বেগম ও ছোট ভাইয়ের শ্যালক বিশাল কে সঙ্গে নিয়ে জামালপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে ফেরার পথে ১৫ অক্টোবর ভোর আনুমানিক ৪টা ৩০ মিনিটে ফতুল্লা থানাধীন জামতলায় পৌঁছান।

ঠিক সেই সময় মোটরসাইকেলযোগে তিনজন দুষ্কৃতিকারী ব্যাটারিচালিত মিশুকের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে দেয়। এরপর দুজন দুর্বৃত্ত রুমি বেগম ও বিশালের গলায় চাকু ঠেকিয়ে রাখে, আরেকজন তাদের কাছে থাকা মালামাল ছিনিয়ে নেয়।

ডাকাতি হওয়া মালামালের মধ্যে ছিল, ১ জোড়া স্বর্ণের দুল (৬২,৫০০ টাকা), ৪টি স্বর্ণের আংটি (১ লক্ষ টাকা), ১টি স্বর্ণের চেইন (১ লক্ষ টাকা), রুপার নুপুর, ব্যাসলেট ও আংটি (১৮,০০০ টাকা) , ৪টি হাতঘড়ি (১৬,০০০ টাকা), ১টি ছোট চার্জার ফ্যান (২,০০০ টাকা), ১টি ভিভো স্মার্টফোন (১২,০০০ টাকা), ১টি হোনার স্মার্টফোন (৪৫,000 টাকা), নগদ ২০,০০০ টাকা

মোট ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩,৭৫,০০০ (তিন লক্ষ পঁচাত্তর হাজার) টাকা

ভুক্তভোগী আতিকুর রহমান বলেন, ওই সময় ভোর ছিল, রাস্তায় খুব একটা মানুষও ছিল না। ওরা গলায় চাকু ধরায় আমরা চিৎকার করার সাহস পাইনি। পরে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় গিয়ে এজাহার দিই।

ঘটনার পরদিনই আতিকুর রহমান ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু অভিযোগের ৪ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি।

ভুক্তভোগীর ভাষায়,থানায় গিয়েছিলাম বারবার। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যায়নি, সিসিটিভিও দেখা হয়নি। শুধু বলে দেখতেছি। আমি প্রবাসী মানুষ, এত কষ্ট করে দেশে এসে এই অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি।

জামতলা এলাকা ফতুল্লা থানার একটি ব্যস্ত সড়ক হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়রা জানান। বিশেষ করে ভোররাত ও গভীর রাতে এই রাস্তায় মোটরসাইকেলযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল তৎপর থাকে।

ডাকাতির মতো একটি বড় ঘটনার চার দিন পরেও পুলিশ কোনো সন্দেহভাজনকে শনাক্ত বা আটক করতে পারেনি এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি তদন্ত আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত। এজাহার রুজু হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

তবে ভুক্তভোগী পক্ষের অভিযোগ, এখনো কোনো তদন্ত কর্মকর্তা সরাসরি ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি এবং ঘটনাস্থলেও যাননি।

ভুক্তভোগী আতিকুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যরা পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কে আছি। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় না আনলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *