ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও তার ভাতিজা পরিচিত আজিজুল ইসলাম আজিজকে ভারতে পালানোর সময় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (২৬ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দর এলাকা থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও দর্শনা থানা পুলিশ যৌথ অভিযানে তাকে আটক করে।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সুলতান মাহমুদ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভারতে পালানোর চেষ্টা করার সময় আজিজকে আমরা আটক করেছি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ আমাদের সহায়তা চেয়েছিল। পরে আমরা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করি। ডিবির টিম আসামিকে নিতে দর্শনা আসছে; রাতেই তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আজিজ গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও জালিয়াতিসহ অর্ধডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।
সম্প্রতি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাকিব খান বলেন,
স্থানীয় থানার সহায়তায় আজিজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তেজগাঁওয়ের চাঁদাবাজি মামলায় সোমবার তাকে আদালতে তোলা হবে। তদন্তের স্বার্থে রিমান্ড আবেদন করা হবে।”
ডিবি ও ব্যবসায়ী সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আজিজুল ইসলাম আজিজ রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে এরশাদ গ্রুপের গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ মালামাল লুট ও নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন।
এই ঘটনায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৩০ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি তেজগাঁও বিভাগ।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জে এরশাদ গ্রুপের রড তৈরির কারখানা দখল ও লুটপাটের সঙ্গেও আজিজের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এবি ব্যাংক থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে স্থাপিত ওই শিল্পকারখানাটি দখল করতে আজিজ ও তার সহযোগীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটান।
কারখানার চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠানোর পর ওই কারখানা থেকে মেশিনারিজ ও কাঁচামাল লুট করে নিয়ে যায় আজিজ ও তার গডফাদারদের গ্রুপ।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় থানায় আজিজসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আজিজ আত্মগোপনে ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন—এমন তথ্য পেয়ে ডিবি পুলিশ সীমান্তে নজরদারি জোরদার করে।
রোববার রাতে দর্শনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করলে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও স্থানীয় থানা যৌথভাবে তাকে আটক করে।