
আসন বিন্যাসের খসড়া চূড়ান্ত রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন হিসাব
আব্দুল ওয়াহিদ
নির্বাচনী এলাকার মানচিত্রে পরিবর্তন এসেছে নারায়ণগঞ্জ শহর দেশের কয়েকটি জেলায়। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত খসড়া অনুযায়ী জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের ভৌগোলিক বিন্যাসে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল। এতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে নতুন সমীকরণ, দ্বিধা এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা।
একদিকে যেমন কিছু আসনে নেতা-প্রার্থীদের অবস্থান সুসংহত হয়েছে, অন্যদিকে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫ নম্বর আসনে পাল্টে গেছে পুরনো হিসাব-নিকাশ। এতে নতুন সম্ভাবনার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
পুনর্নির্ধারিত আসনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ,
নারায়ণগঞ্জ-১: রূপগঞ্জ উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ-২: আড়াইহাজার উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ-৩: সোনারগাঁও ও বন্দর উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ-৪: ফতুল্লা, এনায়েতপুর, বক্তাবলী, কাশিপুর, কুতুবপুর, গোগনগর,আলীরটেক, নারায়ণগঞ্জ-৫: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা। নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসন।
এক সময়ের ‘হেভিওয়েট’ ভরপুর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় থাকলেও পুনর্বিন্যাসের পর দলীয় সমর্থন ও মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন মশিউর রহমান রনি ও মো. শাহ আলম। অন্যান্য প্রার্থীরা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছেন। ফলে এখানকার প্রতিযোগিতা এখন দ্বিমাত্রিক। তবে কে হবেন চূড়ান্ত মনোনীত, তা নিয়ে দলীয় হাইকমান্ড এখনও কিছু বলেনি।
এতদিন যেই আসনটিতে বিএনপির তেমন কার্যকর প্রার্থী ছিলেন না বলে অনেকে অভিযোগ করতেন, সেই আসনে এখন প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছেন দলের একাধিক শীর্ষ নেতা অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন মনোনয়নের জন্য আগ্রহীরা হলো অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, মো: গিয়াসউদ্দিন, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, আবু জাফর বাবুল, এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, খন্দকার খোরশেদ, মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে এ আসনে একজন ‘চমকপ্রদ’ প্রার্থীও আসতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এত প্রার্থীর ভিড়ে দলীয় ঐক্য বজায় রাখা হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
সোনারগাঁও ও বন্দর উপজেলাকে নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে এতদিন এককভাবে মনোনয়নের দাবিদার হিসেবে ছিলেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। কিন্তু নতুন সীমা বিভাজনের পর থেকে আবুল কালামকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বন্দরের কিছু ইউনিয়ন এখন এই আসনে পড়ায় তার মাঠকাজ ও সাংগঠনিক দখল বাড়তে শুরু করেছে।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ-১) এবং আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ-২) আসনে এখন পর্যন্ত বড় কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। প্রার্থীদের পরিচিত মুখগুলোই সক্রিয় রয়েছেন। ফলে এসব আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগের মতই।
নির্বাচনী এলাকার পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক চাপ পড়েছে বিএনপির ওপরই।
কারণ, একাধিক ও শক্তিশালী প্রার্থীর অবস্থান একই আসনে তৈরি হওয়ায় দলীয় মনোনয়ন দিতে গিয়ে দলীয় ঐক্যহীনতা ও বিদ্রোহের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি কিছু পুরনো ‘আনুগত্যভিত্তিক’ প্রার্থী জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে পিছিয়ে পড়ছেন, যা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী ভৌগোলিক চিত্র বদলে যাওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন করে কৌশল সাজাতে হচ্ছে। তবে বিএনপির ভেতরে এই পুনর্বিন্যাস একদিকে যেমন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র উন্মুক্ত করেছে, তেমনি তৈরি করেছে সমন্বয় সংকট। কে কোন আসন থেকে লড়বেন, তা এখন শুধু সময়ই বলে দিতে পারে।