ভাত-মাছের দেশে মাংস-ডিম এখন বিলাসিতা,দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট :

সীমিত রোজগার আর হিসেবি জীবনও এখন আর কাজ করছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মধ্যবিত্তের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। মাসের শেষে হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখা যায়, সব টাকা বাজারেই শেষ। সন্তানকে ভালো খাবার দেওয়া, তার পড়াশোনার খরচ চালানো, ঘরের ভাড়া মেটানো—সবকিছুই কঠিন হয়ে পড়ছে। আর নিম্নবিত্তের কথা তো বলাই বাহুল্য। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর কাছে এখন একবেলা ভালো খাবার খাওয়াও যেন এক বিলাসিতা। মুরগির মাংস আর ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তাদের পাতে কেবল ডাল-ভাত আর আলু সেদ্ধ। সবজির বাজারে গিয়ে তাদের মুখ শুকিয়ে যায়, কারণ আলু ছাড়া আর কোনো সবজি তাদের নাগালের মধ্যে নেই। এই কঠোর বাস্তবতাই এখন দেশের অধিকাংশ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।

কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দামের যে উত্তাপ ছড়িয়েছে, তা যেন থামার কোনো লক্ষণই দেখাচ্ছে না। চাল, সবজি, মাছ, মাংস—সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। এরমধ্যে নতুন করে বেড়েছে মুরগির দাম। কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে শুধু ডিমের দাম, যা সামান্য কমেছে।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু ছাড়া প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই চড়া। গত দুই সপ্তাহে বিশেষ করে মাছ, শাক, ডাল, আটা, ময়দা এবং চা পাতার দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বেড়ে এখন ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ আগে এর দাম ছিল ১৭০-১৮০ টাকা। দিগু বাবুর বাজারের মুরগি বিক্রেতা শরীফ আহমেদ জানান, সবজি ও মাছসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে ২০০ টাকা পর্যন্ত মুরগির দামকে তিনি স্বাভাবিক বলেই মনে করেন।

এদিকে, বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম এলাকাভেদে ৫-১০ টাকা কমেছে। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির লাল ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু খুচরা দোকানে এখনো এক হালি ডিম ৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে।

ভোক্তা ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সবজির বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। আলু এবং পেঁপে ছাড়া ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া কঠিন। নতুন গোলাকৃতির বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকা কেজি দরে। বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা এবং কচুর লতির দাম বাজারভেদে ১০০-১২০ টাকা পর্যন্ত। ধুন্দল কিনতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। ঝিঙ্গা, পটল এবং ঢ্যাঁড়সও ৮০ টাকার আশেপাশে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা মো. আল মেহেদী জানায়, বাজারে সব সবজির দাম বেশী। ৮০ টাকার নিচে কোন সবজি নাই। মাছের বাজারে যেতে ভয় লাগে। বড়লোকের বাজার হলো মাছের বাজার। ভাত-মাছের দেশে মাংস-ডিম এখন বিলাসিতা।

তবে এই চড়া বাজারের মধ্যেও স্বস্তির খবর হলো, আলুর দাম এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি আলু ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে, যা বাজারের সবচেয়ে কম দামের সবজি।

শাকের দামও এখন চড়া। লাল শাক, কলমি বা হেলেঞ্চা শাকের আঁটি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর পুইশাক কিনতে চাইলে প্রতি আঁটিতে ৪০-৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

নিত্যপণ্যের বাজারে চালের দামও এখনো বাড়তি। যদিও গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক-দুই টাকা কমেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চালের দাম এখন ৭৫-৯৫ টাকা। ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকা এবং মোটা ধরনের স্বর্ণা চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *