ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট :
জুলাই অভূর্থানের মহা নায়ক আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধের ছবি রেস্তরার প্রধান ফটকে ব্যবহার করেই চলতো সেলিম প্রধান (ওরফে ডন) সেলিমের সীসা বারসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের আসর। বারিধারা সোসাইটি কমিটি একাধিকবার তাকে নোটিশ দিলেও কোন কিছুরই পাত্তা না দিয়ে রেস্তরার অন্তরালে চলতো অন্ধকার জগতের সকল কার্যক্রম।
গত জুলাইয়ের ১ তারিখে বেশ জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সেলিম প্রধানের কোরিয়ান প্রেমিকা কো ডাউন জিনাসহ আরও বেশকিছু বিদেশী নাগরিকদের নিয়ে উদ্বোধন করেন এই নেক্সাস ক্যাফে। এর পর থেকেই রেস্তরার আড়লে সীসা বার চালাতেন সেলিম প্রধান।
তবে রেস্তরার ট্রেড লাইসেন্সের অনুমতি নেওয়ার সময় সেখানে লিখা ছিল এই রেস্তরায় তিনি কফি ও বিদেশী হালাল খাবার বিক্রি করবেন এমন লিখিত আবেদনের পরে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পরবর্তিতে তিনি সীসা বার চালু করেন।
সুত্রনুযায়ী জানাযায়, এই ক্যাফেটি চালু হওয়ার পর থেকেই প্রতিরাতে তরুণ – তরুণীদের আড্ডায় মেতে থাকতো রেস্ততার ভিতর ও বাহিরের ফটক। সারারাত চলতো এমন কার্যক্রম। ক্যাফের নামে এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পরেন বারিধারা সোসাইটির লোকজন। পরে তারা বাধ্য হয়ে বেশ কয়েকবার তাকে নোটিশ পাঠালেও বন্ধ হয়নি তার কার্যক্রম। উল্টো তাদের শাসিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
গভীর এক অনুসন্ধানে যানাগেছে, রেস্তরার প্রধান ফটক ও ভেতরে জুলাই শহীদের ছবি ব্যবহার ছিলো সেলিম প্রধানের আইওয়াশ নাটক। আর এই নাটকের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন নেক্সাস ক্যাফের ম্যানেজার ও রূপগঞ্জ উপেজলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দলোন নেতা তাওফিকুল ইসলাম শিহাব। গত ৫ আগষ্টের পর থেকেই সেলিম প্রধান রূপগঞ্জের বিভিন্ন কার্যক্রম নিজে সরাসরি না করে শিহাবের মধ্যমে করাতেন সেই থেকে শিহাবের সাথে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। শিহাব ছাত্রআন্দলোন নেতা হওয়ার সুবাদে সেলিমের সকল অপকর্মকে পেছন থেকে শেল্টার দিতেন বলে জানাযায়।
সর্বেশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে গুলশানের বারিধারার নেক্সাস ক্যাফে প্লেস থেকে সেলিম প্রধানসহ আরও ৮জনকে আটক করা হয়। সেখান থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি সীসা উদ্ধারের দাবিও জানায় পুলিশ। পরে গুলশান থানার এসআই মাহমুদুল হাসান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই হাবিবুর রহমান।
প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই মোক্তার হোসেন বলেন, “আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। তবে শুনানি চেয়েছেন সোমবার। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে সোমবার জামিন শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।”
সেলিম প্রধান জাপান বাংলাদেশ গ্রুপ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান। এ গ্রুপের অধীনে ‘পি২৪ গেইমিং’ নামের একটি কোম্পানি আছে, যারা ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনো ও অনলাইন ক্যাসিনোর কারবার চালিয়ে আসছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে আটকের পর তার রাজধানীর গুলশান-বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়েছিল র্যাব। ওই অভিযানে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।
ওই বাসায় দুটি হরিণের চামড়া পাওয়ায় সেলিম প্রধানকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পরদিন গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা করে র্যাব। আর দুদক পরে অবৈধ সম্পদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে। দুদকের ওই মামলায় তার ৮ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
দীর্ঘ চার বছর কারাগারে থাকার পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে জামিনে মুক্তি পান সেলিম প্রধান।
কয়েক মাস বাদে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।
পটপরিবর্তনের পর গত জুনে আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি-বিআরপির প্রধান উপদেষ্টা হন সেলিম প্রধান।