এক ছবিতেই ফেঁসে গেল পুলিশ কর্মকর্তা কনক

পহেলা সেপ্টেম্বর ২০২২। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় যুবদল কর্মী শাওন প্রধান। সেই সময় শাওনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সরাসরি পুলিশকে কেউ দোষারপ করতে সাহস পায়নি। কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীদের ক্যামেরায় তোলা ছবিতে ফাঁস হয়ে যায় কার গুলি বুকে লেগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শাওন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় নারায়ণগঞ্জ ডিবিতে কর্মরত পুলিশের এস আই মাহফুজুর রহমান কনক।

এই কনক চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেছিলেন। সেই গুলি সরাসরি শাওনের বুকে বিদ্ধ হয়। গুলি করার সেই ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশে বের হয়ে আসে এস আই কনক পর পর তিনটি গুলি ছুড়েছিলেন চাইনিজ রাইফেল দিয়ে। কিন্তু চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসে এস আই কনক যে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়েন। সেই রাইফেল তার নামে ইস্যুই করা ছিল না। বর্তমানে সেই এস আই কনক রয়েছেন কারাগারে।

ওই সময় জেলা পুলিশের বেশ কয়েক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছিলেন, কনকের নামে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে কোন রাইফেল ইস্যু ছিল না। ঘটনার দিন এক কনস্টেবলের কাছ থেকে রাইফেল নিয়ে গুলি ছুড়েছিল কনক। যা ছিল সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। ওই দিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শুধু শাওন-ই নয় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল আর ২৫-৩০ জন বিএনপি নেতা কর্মী। শুধু তাই নয়, শাওনকে নিহতের পর তার বড় ভাই মিলন মিয়াকে দিয়ে বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুে মামলা করতে বাধ্য করান ওই সময় পুলিশ কর্তারা। পরে শাওনের বড় ভাই মিলন মিয়া স্বীকারোক্তি দেন যে, নারায়ণগঞ্জ পুলিশের তৎকালীন এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেলসহ বেশ কয়েক কর্মকর্তা চাপ সৃষ্টি করে শাওনের নিহতের ঘটনায় তাকে বাধ্য করে বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে।

অপরদিকে গত বছরর ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ওই বছরের ২১ শে অক্টোবর শাওন নিহতের ঘটনায় তার বড় ভাই মিলন মিয়া বাদী হয়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক ৫ সংসদ সদস্যসহ ৫২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় শাওনের বড় ভাই শাওন হত্যার পুলিশের এস আই কনক কিভাবে তার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে তা বিস্তর বিরবণ দিয়ে জড়িত অন্যান্য আসামিদের সম্পৃক্ততা তুলে ধরেন। পরে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারী বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আর্šÍজাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাওনকে গুলি করে হত্যায় মূল অভিযুক্ত এস আই মাহফুজুর রহমান কনককে। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে। এছাড়া শাওন হত্যা মামলা অন্যতম আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলার তৎকালীন এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেলকে গত ১ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় সরকারি বিধিমালা অনুসারে পলায়নের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় তাকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গতকাল সোমবার শাওন হত্যা ও মামলা প্রসঙ্গে তার বড় ভাই মিলন মিয়া কালের কণ্ঠকে জানান, শাওন হত্যায় পর পরই সেই সময় পুলিশ কর্মকর্তা নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করায়। পরে জানতে পারি আমার ভাইয়ের হত্যার ঘটনায় আমাদের দলীয় বিএনপির লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। অথচ শাওনকে যে এস আই গুলি করে হত্যা করেছিল তার গুলি করার ছবিসহ প্রমান গণমাধ্যম কর্মীরা প্রকাশ হয়েছিল ।

তিনি আরও জানান, স্বৈরাচার সরকার পতনের গত ২১ শে অক্টোবর আমার প্রকৃত হত্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে সক্ষম হয়েছি । আমার প্রকৃত খুনীদের বিচার চাই।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) হাসিনুজ্জামান কালের কন্ঠকে জানান, মামলার যে প্রধান দুজন আসামী তারা কারাগারে রয়েছে, তাদের ১৬৪ জবানবন্দির জন্য আমরা আদালতে পাঠিয়েছিলাম। বাকি অধিকাংশ আসামীরা দেশের বাহিরে আছে। এছাড়া তদন্ত চলছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রসঙ্গত ২০২২ সালে পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরে মিছিল বের করে বিএনপি। ওই সময় ২ নং রেলগেটে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হন যুবদল কর্মী শাওন। শাওন নারায়ণগঞ্জ সদরন উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের গোপালনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীনর ছেলে। সে একটি ইজিবাইর তৈরীর কারখানার ওয়েল্ডিং শ্রমিক ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *