
অভিভাবকহীন এক ইয়াতিম সড়ক: পুরাতন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে দুর্ভোগের শেষ নেই
প্রতিবেদন : আব্দুল ওয়াহিদ
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক যেন এক অবহেলিত সন্তানের মতো পড়ে আছে দশকের পর দশক। গর্তে ভরা, কাদামাটি মাখা এই সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। একসময়ের প্রধান যোগাযোগপথ এখন পরিচিত “ভোগান্তির মহাসড়ক” নামে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করলেও নেই কোনো কার্যকর তদারকি, নেই কোনো সংস্কার।
সড়কের বিভিন্ন অংশে গজিয়ে উঠেছে একেকটি গর্ত, যেগুলো বৃষ্টির পানিতে রীতিমতো ছোট পুকুরে পরিণত হয়। গর্তে আটকে পড়ে যানবাহন, উল্টে যায় অটোরিকশা, আহত হন যাত্রীরা। তীব্র ঝাঁকুনিতে রোগী ও বৃদ্ধ যাত্রীরা পড়েন চরম বিপাকে। যানজট নিত্যসঙ্গী—সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তায় পড়ে থাকতে হয় অসংখ্য যানবাহনকে।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই পুরাতন সড়ক। কিন্তু যুগের পর যুগ সংস্কারহীন অবস্থায় পড়ে থাকা এই সড়ক আজ শিল্পাঞ্চলের জন্য গলার কাঁটা। ফতুল্লা, পঞ্চবটি, শাসনগাঁওয়ের বিসিক শিল্পনগরী, মুন্সীগঞ্জের সিমেন্ট কারখানা, তেলের ডিপোসহ শত শত কারখানার হাজার হাজার পণ্যবাহী গাড়ি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। অথচ, এত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির কোনো অভিভাবক নেই!
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, এটি তাদের আওতার বাইরে। যোগাযোগ করা হলেও ঢাকার সওজ কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয় না। ফোন ধরাও যেন তাদের বিলাসিতা! জেলা ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যে ভোগান্তি কমাতে ট্রাফিক সদস্য বাড়িয়েছে এবং কিছু কারখানার সহায়তায় অতিরিক্ত লোকবল মোতায়েনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সমস্যার মূল সমাধান—সড়ক সংস্কার—সে বিষয়ে এখনো অন্ধকার।
‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি হাজী নূরউদ্দিন আহম্মেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সড়কের দু’পাশে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠেছে, অথচ এই সড়কটির এমন করুণ দশা! সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতার কারণেই আজ এই দুর্ভোগ।”
এদিকে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সোহেল রানা বলেন, “মূল সমাধান আসবে তখনই, যখন সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হবে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বলছি দ্রুত কাজকে শেষ করতে যাতে রাস্তাতে আমরা যানজট মুক্ত করে জনগণের ভোগান্তি কমাতে পারি। ”
নারায়ণগঞ্জ সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিমও স্পষ্ট জানালেন, “এ সড়কটি আমাদের হাতে নেই। থাকলে অন্তত অস্থায়ী সংস্কার করতাম।”
যে সড়ক একসময় ছিল গতি ও উন্নয়নের প্রতীক, আজ তা হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃত্যু আর দুর্ভোগের নামান্তর। অভিভাবকহীনতার দুঃসহ বাস্তবতায় সড়কটির ভবিষ্যৎ যেন প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সময় দ্রুত ও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার—না হলে এই সড়ক আরও অনেক প্রাণহানির সাক্ষী হতে পারে।