সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত নাম উকিলদ্দিন ভূঁইয়া। ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই এই নেতাকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় উকিল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, ফলে তৃণমূলে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
৫ আগস্টের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আওহবায়ক উকিল ভূঁইয়া তার আপন ভাতিজা যুবলীগ নেতা আলামিন ভূঁইয়া এবং ছোট ছেলের শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস কোবরার মাধ্যমে সিদ্ধিরগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পদ্মা ডিপুতে আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা সেখানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন।
পরবর্তীতে আলামিন ভূঁইয়া ও ইলিয়াস কোবরার নামে এক ছাত্র হত্যা মামলার অভিযোগ ওঠে। মামলা হওয়ার পরপরই তারা গা ঢাকা দেন। এই সুযোগে পদ্মা ডিপুর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে উকিল ভূঁইয়া ঢাকার ঢাকা বিভাগীয় মালিক সমিতি কে কাজে লাগান। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেসব হামলা-মামলার শিকার হয়ে মালিক সমিতিতে জায়গা হারিয়েছিলেন, উকিল ভূঁইয়া পরিকল্পিতভাবে সেই প্রকৃত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ লোকদের মালিক সমিতিতে জায়গা করে দেন।
শুধু রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করাই নয়, উকিল ভূঁইয়া এলাকাজুড়ে ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য তার “বখাটে” ও “মাদকাসক্ত” বড় ছেলেকেও রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ। মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন থাকার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন উকিল ভূঁইয়া। স্থানীয়দের দাবি, ৫ আগস্টের আগেই ওই ছেলে ঢাকার বিভিন্ন রিহ্যাব সেন্টারে ৮–১০ বার চিকিৎসা নিয়েছিল, কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। দেশে ফেরার পর তার নামে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি একাধিকবার প্রকাশিত হয়, থানায়ও অভিযোগ করা হয়। কিন্তু “অদৃশ্য শক্তি”র প্রভাবে পুলিশ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তৃণমূল বিএনপি নেতাদের।
সম্প্রতি উকিল ভূঁইয়া নতুন করে আলোচনায় আসেন যখন তিনি বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা আন্দোলনের লিফলেট বিতরণে আওয়ামী লীগের দোসর এবং ছাত্র হত্যা মামলার আসামিদের সাথে নিয়ে মিছিল করেন। এতে শুধু তিনিই নয়, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদও সমালোচনার মুখে পড়েন।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির কর্মসূচিতে বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের যুক্ত করা রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী পদক্ষেপ। এতে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়।
এই ঘটনাগুলোতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, উকিল ভূঁইয়া মামুন মাহমুদের ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সংগঠনকে “নিজের ইচ্ছেমতো” চালাচ্ছেন। অনেকেই দলের হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—দ্রুত সাংগঠনিক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়বে।
তৃণমূলের একাধিক নেতা জানান, “আমরা দলের জন্য জীবন দিচ্ছি, মামলা খাচ্ছি, কিন্তু আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। উকিল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে তৃণমূল ভেঙে পড়বে।”
উকিল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু স্থানীয় পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নেই। জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায়ও তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, তিনি “সবকিছু ম্যানেজ” করে ঘটনাগুলোকে চাপা দিয়ে ফেলেন।
এমনকি ৫ আগস্টের আগে শামীম ওসমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে তিনি গোদনাইল আলিম মাদ্রাসা ও সফর আলী ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদেও বহাল ছিলেন—যা স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উকিল ভূঁইয়া বিএনপির প্রকৃত কর্মীদের দুর্বল করার জন্য তার অনুসারীদের দিয়ে নানা ধরনের “মিথ্যা অপবাদ” ছড়াচ্ছেন। উদ্দেশ্য, সংগঠনের ভেতরে বিভাজন তৈরি করে নিজের অবস্থান শক্ত রাখা। এই কৌশলের মাধ্যমে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে টিকে আছেন বলে অভিযোগ।
উকিলদ্দিন ভূঁইয়াকে ঘিরে একাধিক পর্যায়ের অভিযোগ, বিতর্ক ও সাংগঠনিক অস্বস্তি এখন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এখন কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন—এই প্রভাবশালী ও বিতর্কিত নেতার বিরুদ্ধে দল কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়।